দ্বন্ধ সমাস ও তৎপুরুষ সমাস এর যাবতীয় বর্ণনা ।


দ্বন্ধ সমাস 

 যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্ধ সমাস বলে । যেমন:-
  • ভালো ও মন্দ =ভালোমন্দ 
  • দোয়াত ও  কমল = দোয়াত -কলম 
দ্বন্ধ সমাসে ও, আর ,এবং - এ তিনটি  অব্যয় ব্যবহৃত হয় ,কিন্তু সমস্তপদের বিলুপ্ত ঘটে  । দ্বন্ধ সমাসে সাধারণত অল্পস্বর বিশিষ্ট শব্দ বসে থাকে ।
  • লাভ- লোকসান
  • মাতা-পিতা ইত্যাদি
দ্বন্ধ সমাসের প্রকারভেদ 

১. মিলনার্থক দ্বন্ধ 

 মা-বাপ, ভাই-বোন, মাসি-পিসি, জ্বিন-পরি ,চা-বিস্কুট ,দুধ-সাগু ইত্যাদি ।

২.বিরোধার্থক দ্বন্ধ

দা-কুমড়া , অহি-নকুল ,সাপে -নেউলে ইত্যাদি ।

৩.বিপরীতার্থক দ্বন্ধ 

 আয়-ব্যয়, জমা-খরচ ,ছেলে -বুড়ো ,লাভ- লোকসান ,ছোট -বড় ইত্যাদি ।

৪.অঙ্গবাচক দ্বন্ধ 

 হাত-পা ,নাক- কান, বুক-পিঠ , নাক- মুখ ইত্যাদি ।

৫.সংখ্যাবাচক দ্বন্ধ 

সাত-পাঁচ , সাত- সতের , ঊনিশ-বিশ , নয় -ছয় ইত্যাদি ।

৬.সমার্থক দ্বন্ধ 

 হাট - বাজার , ঘর - দুয়ার ,কল -কারখানা , খাতা - পএ ইত্যাদি ।

৭. অলুক দ্বন্ধ 

যে দ্বন্ধ সমাসে সমস্যমান পদগুলোর বিভক্তি লোপ পায় না ,তাকে অলুক দ্বন্ধ বলে । যেমন:-দুধে-ভাতে , মায়ে - ঝিয়ে , হাতে -কলমে ইত্যাদি ।

৮.বহুপদী দ্বন্ধ 

 তিন বা বহু পদ মিলত হয়ে দ্বন্ধ সমাস হলে ,তাকে বহুপদী সমাস বলে । যেমন:- সাহেব-বিবি-গোলাম , হাত- পা -নাক -মুখ - চোখ ইত্যাদি ।

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------



তৎপুরুষ সমাস 

 পূর্বপদের বিভক্তি লোপ হয়ে যে সমাস হয় এবং যাতে পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতি ফলিত হয় ,তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :- 

  • গাছে পাকা = গাছপাকা
  • বিপদকে আপন্ন =বিপদাপন্ন
তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার :- যথা:-

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস 

 পূর্ব পদে দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় , তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলা হয় । যেমন :- 

  • কলাকে বেচা = কলাবেচা 
  • রথকে দেখা = রথদেখা 
ব্যাপ্তি অর্থেও দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন :- চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস 

পূর্ব পদে তৃতীয়া বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় ,তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :- 

  • মন দিয়ে গড়া = মনগড়া 
  • শ্রম দ্বারা লব্ধ = শ্রমলব্ধ 
(চন্দ্র , হীরা , মনি , চন্দন ,স্বর্ণ ইত্যাদি ) উপকরণ বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন:- স্বর্ণ দ্বারা মন্ডিত = স্বর্ণমন্ডিত 

পূর্বপদের তৃতীয়া বিভক্তির লোপ না হলে অলুক তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন :-

  • তেলে ভেজা = তেলেভাজা 
  • কলে ছাঁটা = কলে ছাঁটা 
(তাঁতেবোনা , মায়েখেদানো , পোকায়কাটা , হাতেকাটা ইত্যাদি ) 

চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস 

পূর্ব পদে চতুর্থী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় , তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :- 

  • গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি 
  • বিয়ের জন্য পাগল = বিয়েপাগল 
পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস 

পূর্ব পদে পঞ্চমী বিভক্তি লোপ পেয়ে যে সমাস হয় , তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :-

  • বিলাত থেকে ফেরত = বিলাতফেরত 
  • ঋণ হতে মুক্ত = ঋণমুক্ত 
সাধারণত চ্যত , জাত , আগত ,ভীত ,গৃহিত ,বিরত , মুক্ত ,উত্তীর্ণ , পালানো ,ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন :- 

  • স্কুল থেকে পালানো = স্কুলপালানো 
  • জেল থেকে মুক্ত = জেলমুক্ত 
কোন কোন সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে এর , চেয়ে ইত্যাদি অনুস্বর্গের ব্যবহার হয় । যেমন :- প্রাণের চেয়ে প্রিয় = প্রাণপ্রিয় 

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস 

পূর্ব পদে ষষ্ঠী বিভক্তি লোপ পেয়ে  যে সমাস হয় , তাকে ষষ্ঠী তৎপরুষ সমাস বলে । যেমন :- 

  • রান্নার ঘর = রান্নাঘর 
  • চায়ের বাগান = চা-বাগান 
  • খেয়ার ঘাট = খেয়াঘাট 
ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে "রাজা" স্থলে "রাজ" পিতা ,মাতা, ভ্রতা স্থলে " পিতৃ ,মাতৃ , ভ্রাতৃ " হয় । যেমন:-

  • গজনীর রাজা = গজনীরাজ 
  • রাজার পূত্র = রাজপূত্র 
  • পিতার ধন = পিতৃধন 
  • মায়ের সেবা = মাতৃসেবা ইত্যাদি 
পরপদে সহ , তুল্য , নিভ ,প্রায় ,প্রতিম - এসব শব্দ থাকলেও  ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন :-
  • পত্নীর সহ = পত্নীসহ 
  • কন্যার সহ = কন্যাসহ 
  • সহোদের প্রতিম = সহোদরপ্রতিম
কালের কোন কোন অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে । যেমন :- 
  • অহ্নের পূর্বভাগ = পূবাহ্ন 
পরপদে রাজি ,গ্রাম , বৃন্দ ,গন , যূথ ইত্যাদি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয় । যেমন:- 
  • ছাত্রের বৃন্দ = ছাত্রবৃন্দ 
  • হস্তীর যূথ = হস্তীযূথ 
অর্ধ শব্দটি পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয় । যেমন :-
  • পথের অর্ধ = অর্ধপথ 
শিশু , দুগ্ধ, ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয় । যেমন :- 
  • মৃগীর শিশু = মৃগশিশু 
  • ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ 
অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস 

 ঘোরার ডিম , মাটির মানুষ ,  মামার বাড়ি , সাপের মা , মনের মানুষ , কলের গান ইত্যাদি 

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস 

 পূর্ব পদে সপ্তমী বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয় , তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :- 
  • গাছে পাকা = গাছপাকা 
  •  রাতে কানা = রাতকানা
  • অকালে মৃত্যু = অকালমৃত্যু 
 সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোন কোন সময় ব্যাসবাক্যের পরপদ সমস্ত পদের পূর্বে বসে । যেমন :- 
  • পূর্বে ভূত = পূর্বভূত 
  • পূর্বে অশ্রুত = অশ্রুতপূর্ব ইত্যাদি ।
নঞ্চ তৎপুরুষ সমাস 

 না- বাচক নঞ্চ অব্যয় ( ন ,নেই ,নাই , নয় ) পূর্বে বসে যে সমাস হয় , তাকে নঞ্চ তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :-
  • ন ভাব = অভাব 
  • ন সুখ = অসুখ
  • ন কাল = অকাল 
উপপদ তৎপুরুষ সমাস 

 কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয় , উপপদ তৎপুরুষ  সমাস  বলে । যেমন :- 
  • জলে চরে যে = জলচর 
  • জল দেয় যে = জলদ 
  • ছেলে ধরে যে = ছেলেধরা 
  • পকেট মারে যে = পকেটমার 
অলুক তৎপুরুষ সমাস 

 যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি লোপ হয় না ,তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে । যেমন :- 
  • গায়ে পড়া = গায়েপড়া 
  • ঘিয়ে ভাজা = ঘিয়েভাজা 
  • কলের গান = কলেরগান 
  • গরুর গাড়ি = গরুরগাড়ি ইত্যাদি ।


Reactions

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ