 |
আপেল এর পুষ্টিগুন এবং উপকরিতা |
আপেল
আপেল একটি ফল । রোসাসিস (Rosaceae) পরিবারের ম্যালিয়াস ডামেস্টিকা প্রজাতিভুক্ত এটি । আপেল এর প্রধান স্বাদই হলো মিষ্টি । এটি সর্বত্র মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয় । আপেল সারাবিশ্বই কম বেশি চাষ হয়ে থাকে । আমাদের দেশেও অনেক জায়গায় আপেলের চাষ হয় । জেনাস ম্যলুস প্রজাতি সবচাইতে বেশি চাষ হয় আপেলের অন্যান্য প্রজাতি গুলোর মধ্যে । এশিয়াকে আপেলের জন্মস্থান হিসাবে ধরা হয় । তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলোতেও আপেল ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে । জাত হিসাবে বিবেচনা করলে বলা যায় আপেলের মোট ৭৫০০টির বেশি পরিচিত জাত রয়েছে ।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যালিস ,আমব্রসিয়া ,আনানাসরেনেতি,কালো আর্কআনসাস,অ্যারোমা ,বেল্লে ডে বসকভ ,ব্র্যামলী,কক্স অরেঞ্জ রেনিত ,কক্স পামোনা , ক্রিপস পিংক , ডিসকভারি ,এগ্রিমন্ট রাসেট , ফুজী ,গালা ,গ্লোন্ডেন দেলিশিয়াস ,গ্রীন স্মিথ ,যোনাগোল্ড ,লোবো,স্বচ্ছ হলুন ইত্যাদি আরো অনেক প্রজাতি । আপেল হলো একটি পাতলা গাছ । আপেল গাছ হলো একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ । এটি সাধারণত ২-৪.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হবে থাকে । বন্যের প্রজাতি একটু বেশি লম্বা হয়ে থাকে । আপেলের বন্য জাত সাধারণত ৯ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় । আমাদের দেশে কাল অনুযায়ী আপেল হেমন্ত কালে পাকে । এই ফলটির ব্যাস সাধারণত ৫-৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে । আপেল চাষ অনেকেরই জীবিকার উৎস হিসাবে আছে । এটি ফলটি চাষ করে অনেক দেশই বানিজ্যিক ভাবে সফলতা লাভ করেছে । আসুন নিজ থেকে জেনে নেই আপেলের পুষ্টিগুন সম্পর্কে _
আপেলের পুষ্টিগুন
আপেল ফল পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ । একট আপেল ফলে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুন বিদ্যমান । তাই আমাদের দেশে আপেল ফল রোগীর পথ্য হিসাবে কাজ করে । এখন আমরা জানবো প্রতি ১০০ গ্রাম আপালে কতটুকু পুষ্টিগুন বিদ্যমান । তাছাড়াও আপেলে প্রয় ৮০% পানি থাকে । তাই এটি আমদের শরীরের জন্য অতীব জরুরী ।
- খাদ্যশক্তি --১২ কিলোক্যালরি
- চিনি --১৩.৩৯ গ্রাম
- শর্করা --১৩.৮১ গ্রাম
- খাদ্যআঁশ--২.৪ গ্রাম
- আমিষ--০.২৬ গ্রাম
- চর্বি --০.১৭ গ্রাম
- জলীয় অংশ--৮৫.৫৬গ্রাম
- ভিটামিন এ --৩ আইইউবিটা
- ক্যারোটিন --২৭ আইইউ
- লুটেইন --২৯ আইইউ
- থামামিন --০.০১৭ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন --০.০৯১ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লেভিন --০.০২৬ মিলিগ্রাম
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড--০.০৬১ মিলিগ্রাম
- ফোলেট --৩ আইইউ
- ভিটামিন সি --৪.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই --০.১৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে --২.২ আইইউ
- ক্যালসিয়াম --৬ মিলিগ্রাম
- আয়রন --০.১২ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম --৫ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস--১১ মিলিগ্রাম
- ম্যাংগানিজ --০.০৩৫ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম -- ১০৭ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম--১ মিলিগ্রাম
- জিংক --০.০৪ মিলিগ্রাম
- ফ্লোরাইড --৩.৩ আইইউ
আপেলের ১০ টি উপরারিতা
এখন আমরা জানবো আপেল এর উপকারিতা সম্পর্কে । নিচে আপেল এর এর ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ____
**আমেদের দাঁত এর জন্য আপেল অনেক প্রয়োজনীয় । আপেল খেলে দাঁত এর ধারুণ উপকার হয় । যখন আমরা আপেল কামড়ে খাই তখন আমাদের মুখে লালার সৃষ্টি হয় । এই লালার ফলে দাঁতের কোণা থেকে ক্ষতিকারক ব্যকটেরিয়া বেরিয়ে আসে । যার ফলে আমাদের দাঁত এর কোন ক্ষতি হয় না । দাঁত থাকে ব্যাকটেরিয়া বিহীন সুস্থ্য ও স্বচ্ছ ।
**আপেল খেলে অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সরের সম্ভবনা ২৩% হারে কমে যায় । কারণ আপেলে প্রচুর পরিমাণ ফ্ল্যাভোলিন নামক একটি উপাদান থাকে । যা ক্যান্সার রুধে সাহায়ক ভূমিকা পালন করে । তাছাও আপেল ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে সাহয়াক ।
**আপেল এ রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নামক একটি উপাদান ,আমরা সবাই জানি যে এই উপাদানটি আমাদের হার্ট সুস্থ্য রখে । তাই বলা যায় যে আমাদের হার্ট ভালো রাখার জন্য আপেল এর ভূমিকা অপরিসীম ।
**আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে । প্রতিদিন গড়ে তিনটি আপেল খেলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে ।
**আমাদের ত্বকের জন্য আপেল অনেক দরকারী । প্রতিদিন আপেল খাওয়ার ফলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে ।
**হজম ক্ষমতা বাড়ায় । আপেল আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । কেননা প্রতিদিন আপেল খাওয়ার ফলে হজমের জন্য উপকারী ব্যকটেরিয়া গুলো বৃদ্ধি পায় । ফলে হজম শক্তি বাড়ে ।
**আপেল রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বোরাণ নামক উপাদান যা আমাদের হাড়কে শক্ত করে । তাই নিয়মিত আপেল খাইলে আমাদের হাড় শক্ত হবে ।
**আপেল রয়েছে প্রায় ৮০% পানি । যা আমাদের শরীরের পানি শূন্যতা পূরণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । তাই আমাদের শরীরে ক্লান্তি বা দূর্বলতা আসলে আপেল খাইলে আমাদের নিমেষে চাঙ্গা করে তুলবে ।
**ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে । আপেল এ পেকটিন নামক একটি উপাদান থাকে । যা ইনসুলিনের পরিমাণ ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ।
**অ্যালঝেইমার্স প্রতিরোধ করে । প্রতিদিন আপেল খেলে বয়সজনিত সমস্যা অ্যালঝেইমার্স রোগ প্রতিরোধ হয় ।
সবুজ আপেল এর উপকারিতা সমূহ
একটি আপেলের উপকারিতা অপরিসীম । কিন্ত আপেলটি যদি সবুজ আপেল হয় তাহলে এর উপকারীতা কয়েকগুন বেড়ে যায় । সবুজ আপেল আমাদের পুষ্টির ভারসম্য রক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । তাছাড়াও আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সবুজ আপেল যোগ করা যেতে পারে । তা শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর জন্যই হোক বা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ।
ওজন কামাতে সাহায্য করে
যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য সবুজ আপেল অনেক গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে । অনেকে তার বাড়তি ওজন কমাতে চান কিন্তু কোন ভাবেই খাওয়া থামাতে পারেন না । গ্রীন আপেল তাদের জন্য আর্দশ সরূপ । আপনার খিদা নিবারণ করার ক্ষেত্রে সবুজ আপেল এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । কেননা এটি অতি তাড়াতাড়ি পেট ভবিয়ে দেয় । তাছাড়াও আপেল ফাইবার হজম হতে অনেক বেশি সময় নেয় । তাই আপনার ঘন ঘন খিদাও লাগবে না । সর্বপরি এটাই বলা চলে আপনার ডাইটে সবুজ আপেল রাখার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।
হাঁড় মুজবুত করে
আমাদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের হাড়ে শক্তি লোপ পেতে থাকে । যার ফলসূতিতে বৃদ্ধ বয়সে হাঁডে প্রচন্ড যত্ননা হয় । যদি নিয়মিত সবুজ আপেল খাইতে পারেন তাইলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে । কেননা সবুজ আপেল রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি । যা হাঁড়কে করে ভিতর থেকে শক্ত ।
চুল ভালো রাখে
চুল আমাদের একটি মূল্যবান সম্পদ । চুল এর যত্নে সবুজ আপেল এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । চুলে খুসকি আমাদের চুল নষ্ট করে দেয় । সবুজ আপেল বেটে আমাদের মাথায় পেষ্ট আকারে দিলে খুসকি থেকে মুক্তি মিলবে ।তাছাড়াও এটি অস্বাস্থ্যকর ও শুষ্ক চুলের মোকাবিলা করে চুলকে করে মসৃণ ও শক্ত ।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
আমরা প্রতিনিয়ত অনেক ক্ষতিকারক কোলেস্টরল খায় । যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। গ্রীন আপেল আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেষ্টেরল কমিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্থ্য রাখে । এই ক্ষেত্রে গ্রীন আপেল কাচা বা জুস বানিয়েও খাওয়া যাইতে পারে । তাছাড়াও ব্লাড সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখে ।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
সবুজ আপেল রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ । আমারা সবাই জানি ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য অনেক ভালো । ্তাই অনায়াসে বলা যায় ,সবুজ আপেল আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে ।
পরিশেষে বলা যায় যে দিনে একটি আপেল আমাদেরকে ডাক্তার থেকে দূরে রাখে । তাই আমাদের সুস্থ্য থাকার জন্য নিয়মিত ফ্রেস আপেল খাওয়া দরকার ।
0 মন্তব্যসমূহ
please do not enter any spam link in the comment box .
Emoji