পেটের মেদ একটি বিব্রতকর বিষয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যে পেটের মেদ বাড়ায় তা নয়, বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়াতে পারে। একবার পেটে মেদ জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না, এ ধারণা ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্থ হলে সহজে মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
তার আগে জানা জরুরি কোন ধরনের খাবারের কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে। সাধারণত মদ্যপান, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার, নিয়মিত লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে।
ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেন, যখন একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা শরীরের বাড়তি মেদ জমা বা ভুঁড়ি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পেটের মেদ বা ভুঁড়ি থেকে বাঁচতে কী করা যায়।
১. মেদহীন সুস্থ শরীর পেতে পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই।
২. খাদ্যতালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন—লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবারে মিলবে আঁশ।
৩. গ্রিন-টিতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর। তাই দুধ ও চিনি বেশি দিয়ে চা পানের অভ্যাস বদলে নিন গ্রিন-টিতে।
৪.খাওয়ার সময়ে পেটে একটু জায়গা রেখে খান। খাবার ভালো হজম হবে। অতিরিক্ত ক্যালোরির সমস্যাও হবে না।
৫.বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত তেল-মশলা, ঘি-মাখন এড়িয়ে চলুন। রেড মিট এড়িয়ে চলুন। ফাস্ট ফুড, ডিপ-ফ্রাই করা খাবার, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংক্স, অ্যালকোহল না খাওয়াই ভালো। বদলে স্ন্যাক্স হিসেবে খান ফল, গ্রিলড্ খাবার, চাট, স্যালাড, আমন্ড, টক দই।
৬.জিমে যাওয়ার আলাদা সময় না থাকলে বাড়িতেই করুন শরীরচর্চা। রোজ সকালে উঠে আধ ঘণ্টা রাখুন নিজের জন্য। স্কিপিং, বুক ডন, বৈঠক, পুল-আপের মতো খালি হাতে ব্যায়াম করুন। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নির্দ্বিধায় করতে পারেন এই এক্সারসাইজগুলো। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে কোনো শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞের থেকে সঠিক ফর্ম অবশ্যই জেনে নেবেন।
৭.সকাল শুরু করুন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং শরীরে মেদ জমার প্রক্রিয়া ধীর হবে।
৮.অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বসে থাকেন বা শুয়ে পড়েন। তাদের খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে। সে জন্য খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে-বসে না থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা উচিত।
৯.একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করুন। সারা দিনের অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার খাবারকে ৫-৬ বারে গ্রহণ করুন। সেখানে তিনবার প্রধান খাবার ও দুই-তিনবার নাশতাজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
১০.প্রচুর পানি পান করা সুস্থ-সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজন প্রচুর পানি। কিন্তু আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন, পানি আমাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করে। স্বাস্থ্য বিষয়ক কোচ ভার্জিনিয়া গ্রুলার বলেন, "পানি আমাদের ক্ষুধাভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরকে শক্তি দেয়। মেটাবলিজম ও হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে।"
১১.দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরের যেসব ক্ষতি করে, তার মধ্যে একটি হলো এটি আমাদের ওজনও বাড়িয়ে তোলে। গ্রুলারের মতে, দীর্ঘমেয়াদি দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার ফলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায় যা ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তে সুগারের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। উচ্চমাত্রায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে চিনিজাতীয় ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। তাই বই পড়া, হাটাহাটি, জার্নালিং কিংবা শরীরচর্চার অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
১২.শরীরের বাড়তি ক্যালরি ঝরানোর জন্য হাঁটাহাঁটি করা যে একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম তা কে না জানে! তাছাড়া, হাঁটলে দুশ্চিন্তা কমে।
১৩.শরীরের শুধুমাত্র একটি অংশের মেদ কমানোর দিকে মনোযোগ না দিয়ে পুরো শরীরের প্রতিই মনোযোগ দিতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক রবারট হার্বস্ট বলেন, "পেটের মেদ কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পুরো শরীরের চর্বি কমানো। শরীরের ফ্যাট কমে গেলেই আস্তে আস্তে পেটের মেদ কমতে থাকবে। ওজন অনুশীলনের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের মেটাবলিজম বাড়িয়ে তুলতে হবে। এটি পেশীকে সচল করে যা ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে ফিট ও শক্তিশালী রাখে।"
১৪.খাবার খাওয়ার সময় ভালোভাবে চিবিয়ে খান। এতে খাবার ভালোভাবে হজম হবে, সঙ্গে পেটে গ্যাসও জমবে না।
0 মন্তব্যসমূহ
please do not enter any spam link in the comment box .
Emoji